আব্বু ঈদের নামাজ পড়ে বাসায় এসে আম্মুরে জিজ্ঞেস করলেন, 'ছাগলটা কই?'
আম্মু এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো, 'কই আবার? দেখ গিয়ে ঘরে বসে মোবাইল টিপতেছে।'
- মোবাইল টিপতেছে মানে?
- মানে বুঝো না? তোমার ছেলের মোবাইল টেপা ছাড়া আর কোনো কাজ আছে?
.
আব্বু কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বিরক্ত গলায় বললেন, 'আমি কুরবানির জন্য কিনে আনা ছাগলটার কথা জিজ্ঞেস করেছি। ওটা কই?'
.
এই ঘটনা শুধু আজকের না। গত একসপ্তাহ আগে যখন আব্বু কুরবানির জন্য হাট থেকে ছাগলটাকে কিনে বাসায় নিয়ে আসছেন, সেদিন থেকেই সমস্যা শুরু হয়েছে। আমি ভুগতেছি আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে। আপু বলেছে, 'বাসায় এতোদিন মাত্র একটা ছাগল ছিলো। এখন আরেকটা কিনে আনায় দুইটা ছাগল হলো। সো, ঝামেলা তো একটু হবেই।'
.
অবশ্য আপুর এই থিওরির সাথে আমি একমত নই। কিন্তু আমি একমত না হলেও দেখা যাচ্ছে বাসার পরিস্থিতি তাতে কিছুমাত্র চেঞ্জ হয়নাই।
.
ছাগল কিনে আনার পরেরদিনের কথা। আব্বু এসে আম্মুরে বলেছে, 'ছাগলটারে কিছু খাইতে দিছো? সকাল থেকে খাবার দেয়া হয়নাই।'
আম্মু মুখ ঝামটা দিয়ে বললো, 'মাথা ঠিক আছে তোমার? সকাল থেকে অন্তত তিনবার খাইছে। এখনো খাচ্ছে।'
- কি বলো? কে খাবার দিলো?
- তারে খাবার দেয়া লাগে? সে নিজেই নিয়ে খাইছে।
- কি খাইছে?
- যা খায়, তাই। সকালে পরোটা আর ডিমপোচ খাইছে। তারপর চা খাইছে, নুডুলস খাইছে। এখন আবার খিচুড়ি ভাত খাচ্ছে।
আব্বু অবাক হয়ে বললেন, 'ছাগল ডিম পোচ খায়? চা খায়? নুডুলস খায়? কাল যে কাঠাল পাতা আনছিলাম, সেটা দাওনি?'
.
আমি নুডুলস শেষ করে টেবিলে বসে আচার দিয়ে খিচুড়ি মাখাচ্ছিলাম। আম্মু একবার আমার দিকে আরেকবার আব্বুর দিকে তাকালেন। আমি খিচুড়ি ভাতের মধ্যে হাত ধুয়ে উঠে পড়লাম। কেউ আমারে বুঝান, এই জীবন রেখে আসলে লাভ কি?
.
তার দুইদিন পর এক আন্টি আসছে বাসায়। সাথে আন্টির সুন্দরী মেয়ে তুলি। তুলিরে আবার আমি আমার জীবনের চাইতেও বেশি ভালোবাসি। যেটা তাকে এখনো জানানো হয়নাই। জানাবো জানাবো করতেছি। তবে তার আগে আপাতত নিজেরে তুলির সামনে বিশাল কিছু প্রমান করার চেষ্টায় আছি। ফ্রেন্ডের বাইক নিয়ে চুলে স্পাইক করে তুলির বাসার সামনে গিয়ে হর্ণ দেই।
.
তো তারা মা মেয়ে আসছে ছাগল দেখতে। বাসায় ঢুকেই আপুরে পাইছে। জিজ্ঞেস করেছে, 'তোমাদের ছাগল দেখতে আসছি। কত বড় ছাগল? কয় কেজি?'
আমি পাশের রুম থেকে শুনি আপু বলতেছে, 'সারাদিন বসে বসে খায় তো। ওজন মেলা। ষাট কেজি তো হবেই।'
- কি বলো, এ তো বিশাল ব্যাপার। প্রায় গরুর মতই।
- প্রায় কি? আমাদের গরু আর ছাগল দুটোর মধ্যে পার্থক্য নাই। যে ছাগল, সেই গরু। আপনি দেখে আলাদা করতে পারবেন না।
.
তুলি জিজ্ঞেস করলো, 'আপু ছাগলটার গায়ের রঙ কি?'
- রঙ তো ফর্সাই।
- ফর্সা? ছাগলের রঙ ফর্সা কিভাবে হয়? হিহি। আমি দেখবো ফর্সা ছাগল।
.
তুলির হাসি শুনে আমার মনে হলো কেউ ভরা বাজারের মধ্যে আমার প্যান্ট খুলে দিয়েছে। কি লজ্জা! আমি ছোটবেলা থেকে একটু নির্লজ্জ টাইপের না হলে এতোক্ষণ লজ্জায় মরেই যেতাম।
.
এমন সময় ঐ রুমে আম্মু আসলেন। এসে জিজ্ঞেস করলেন, 'কি নিয়ে কথা হচ্ছে?'
আপু বললো, 'আন্টি আর তুলি ছাগলটারে দেখতে আসছে।
আম্মু বললেন, 'তো ছাগলটারে বল দোকান থেকে কিছু নিয়ে আসতে। ওদের নাস্তা দে।'
তুলির আম্মু বিশাল অবাক, 'ছাগল দোকানেও যায়?'
আপু হেসে বললো, 'আমাদের বাসায় তো দুইটা ছাগল। একটা দোকানে যায়, আরেকটা যায় না।'
তুলি হাততালি দিয়ে বললো, 'আমি দোকানে যাওয়া ছাগলটাকে দেখব। ওটাকে কুরবানি দিবা?'
- নাহ, কুরবানি দেয়া ছাগল আলাদা৷ আসো দেখাই। রান্নাঘরে আছে।
.
আপু আন্টিদের নিয়ে রান্নাঘরের দিকে গেলো৷ তুলি পেছন থেকে বারবার বলতে লাগলো, 'আমি দোকানে যাওয়া ফর্সা ছাগলটাকে দেখবো।'
.
মিনিট দশেক পরে দেখি আমার ঘরের জানালা দিয়ে তুলি আর তুলির আম্মু উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। কি একটা অবস্থা। এই জীবনে তুলি আর আমার সাথে প্রেম করবে? কোনোদিন না। আমি সিঙ্গেল অবস্থায় বুড়ো হবো, তারপর সিঙ্গেল ই মারা যাবো।
.
আজকে ঈদ। ঈদটা চলে গেলে আমি বেঁচে যাই। আব্বু নামাজ থেকে এসে ছাগল খুজছেন। আমি পাশের রুমে ফেসবুকিং করতেছি। আর একটা শর্টফিল্ম দেখতেছি। এমন সময় শুনি বাইরে চিল্লাচিল্লি হচ্ছে। ছাগলটাকে নাকি পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া যাচ্ছে না তো যাচ্ছেই না। দড়ি খুলে পালাইছে সম্ভবত। আব্বু রেগে অস্থির।
- কেউ একটু খেয়াল রাখবে না? এখন আমি কি কুরবানি দিব? হুজুর এসে বসে আছে, সে অন্য বাড়িতেও যাবে কুরবানি দিতে।
আম্মু আমতা আমতা করে বললো, 'আমি সকালেও তো দেখলাম'
- সকালে দেখলে এখন যাবে কই? বড় রাস্তার দিকে কেউ গিয়ে খোজ নাও। নাহলে অন্য ছাগলের ব্যবস্থা করতে হবে। কিছু তো একটা লাগবে কুরবানির জন্য। পোলাডা কই, ওরে ডাকো তো।
.
হোয়াট! আমাকে কেন ডাকতেছে? আমি শোয়া থেকে উঠে বসলাম। আমি যা ভাবতেছি তাই? ধুর, আমি কি পাগল হলাম? নিজেই নিজেকে বুঝলাম। আমি আব্বু একমাত্র ছেলে। আমাকে সবাই ভালোবাসে। আদর করে। ছাগল তো ডাকে মজা করার জন্য। খুব সম্ভবত, বড় রাস্তায় ছাগল খুজতে যাওয়ার জন্য আমাকে ডাকতেছে। সম্ভবত কি, এটাই হবে। আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। শতভাগ নিশ্চিত এজন্যই ডাকতেছে। ইয়েস! কোনো সন্দেহ নাই।
.
আমি উঠে বাথরুমে গিয়ে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিলাম। যেটাই হোক, তারপরও আমি কোনো রিস্ক তো নিতে পারিনা, তাইনা?
সংগ্রহীত
0 মন্তব্যসমূহ