বাপজানের মুখে শোনা মুক্তিযুদ্ধ - ইমরান ইভান

দেশাত্মবোধক মুক্তিযুদ্ধের কবিতা

muktizuddher kobita



বাপজানের মুখে শোনা মুক্তিযুদ্ধ
- ইমরান ইভান


জমি-জমা যাই আছিলো তার ফসল দিয়া আমাগো বছরডা ঘুরতো।
গেরামের মাইঝখানে যে দীঘিডা,
ছোডবেলায় বাপজান আর তার বন্ধুরা এতে ডুব-সাঁতার খেলতো।
বাপজানের বন্ধু জমির মিয়া পানিতে ডুব দিয়া নাকি মেলাক্ষণ থাকতে পারতো!
বাপজানের মুখে শোনা কথা।
দাদা মইরা যাওয়ার দুই বছর পর দ্যাশে যুদ্ধ আইলো,
আহ! সোনার মত গেরামডারে পুইড়া ছাই বানাই দিলো।

গেরামে যখন মিলিটারি ঢুকলো_
জমির মিয়া দৌড়াইয়া ঝাঁপ দিলো দীঘির পানিতে।
ছয়মাস বয়সী আমার একটা বইন আছিলো,
বাপ-মায়ের পয়লা সন্তান।
মিলিটারির ডরে মানুষ যখন জান লইয়া দৌড়াইতাছিলো,
ছোড চাচা মায়রে ডাক দিয়া কয়’ ভাবি বালিশ কোলে লইয়া দৌড়াইতাছো ক্যান?
বাপজানের চোখের কোণায় পানির দানা বড় হয়তে থাকে।
‘তর মা বেদিশায় তর বইনরে মনে কইরা বালিশ লইয়া দৌড় দিছিলো’
চোখের কোণায় পানি জমে আমারও।
বইনডা বাঁইচা থাকলে আমারে কত্তো আদর করতো!
আমার জন্ম অইছে যুদ্ধের মেলা পরে।
কইলজায় ডর আয়ে, তহন যদি আমি থাকতাম-
জানোয়াররা বইনের মত আমারেও ঘরসহ পুড়াই মারতো?
জমির মিয়ার রক্তে দীঘির পানি সিঁদুরের মত লাল অইয়া গ্যাছিলো,
মিলিটারিরা তারে দীঘির মইধ্যেই গুলি কইরা মারছে।

ছোড চাচা মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেওয়ার কারণে
শান্তি কমিটির লোকেরা চাচা আর ফুফুরে ধইরা নিয়া গ্যাছিলো।
দাদীরে লইয়া বাপ-মায় গ্যালো পূবে, বর্ডার পার অইয়া।
রিফুজি ক্যাম্পে খাওন আর চিকিৎসার অভাবে দাদীও চইলা গ্যালো দাদার কাছে।

দ্যাশ স্বাধীন অইলো।
বাপজান আর মায় গেরামে ফিরা আইয়া দ্যাখে-
আমাগো ভিটা,জমি,দীঘি সব গ্যাছে গাজীর দখলে।
বাপজান কয় হ্যায় নাকি রাজাকার আছিলো।
অহন আমাগো যে বাড়িডা এইডা আছিলো খাল।
এই খালের পানিতেই নাকি ছোড চাচার লাশ ভাইসা উঠছিলো,
ফুফুরে পাওয়া গ্যাছিলো গাজী মিয়ার বাড়ীর পাশের তেঁতুল গাছে, ফাঁসিতে লটকানো।

বাপজান চোখ মুছতে মুছতে কয়,
হায়রে মুক্তিযুদ্ধ, আমার সবকিছু লইয়া গ্যাছে!
তবে মুক্তিযুদ্ধ, আমার মায়ের দ্যাশটারে স্বাধীন কইরা দিয়া গ্যাছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ