[IMTIAZ MAHMUD]
ইমতিয়াজ মাহমুদের নির্বাচিত কবিতাগুচ্ছ
ইমতিয়াজ মাহমুদ এর জন্ম ১৯৮০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ঝালকাঠি জেলায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কে স্নাতক। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিতে এক বছর কাজ করার পর ২০০৬ সাল থেকে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে কর্মরত।
প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় পাক্ষিক শৈলী পত্রিকায় ১৯৯৯ সালে।
প্রকাশিত বইয়ের মাঝে আছে অন্ধকারের রোদ্দুরে (২০০০), মৃত্যুর জন্মদাতা (২০০২), সার্কাসের সঙ (২০০৮), মানুষ দেখতে কেমন (২০১০), নদীর চোখে পানি ও অন্যান্য কোয়াটরেন (২০১৩), পেন্টাকল (২০১৫), ম্যাক্সিম (২০১৬), কালো কৌতুক (২০১৬) প্রভৃতি। পেন্টাকল কাব্যগ্রন্থের জন্য তাঁর ঝুলিতে এসেছে কলকাতার কৃত্তিবাস পুরস্কার।
নিঃসঙ্গতা
আন্দামান সাগরের এক একলা দ্বীপে এক সাধু যখন একটা পাখির কিচির মিচিরে অতিষ্ঠ হয়ে ভাবছিলো কিভাবে আরো একা হওয়া যায় তখন জাকার্তার জনাকীর্ণ সড়কে হাজার হাজার মানুষের ভিড় ঠেলে একটা লোক একা একা হেঁটে যাচ্ছিলো
আন্দামান সাগরের এক একলা দ্বীপে এক সাধু যখন একটা পাখির কিচির মিচিরে অতিষ্ঠ হয়ে ভাবছিলো কিভাবে আরো একা হওয়া যায় তখন জাকার্তার জনাকীর্ণ সড়কে হাজার হাজার মানুষের ভিড় ঠেলে একটা লোক একা একা হেঁটে যাচ্ছিলো
আবর্তন
সময় শূন্য খায় সেকেন্ড সময় খায় মিনিটি সেকেন্ড খায় ঘন্টা মিনিট খায় দিন ঘন্টা খায় মাস দিন খায় বছর মাস খায় যুগ বছর খায় কাল যুগ খায় মহাকাল কাল খায় শূন্য মহাকাল খায় সময় শূন্য খায়!
বই
খোদা আমাকে মানুষ বানালো।
আমি হতে চেয়েছিলাম বই।
বাংলা বই। লাল মলাট।
মোমের আলোয় বালকেরা
আমাকে গলা ছেড়ে পাঠ করতো।
বাংলা বই। মোমের আলোয়।
খোদা আমাকে মানুষ বানালো।
কেউ পড়তে পারে না!
আমি হতে চেয়েছিলাম বই।
বাংলা বই। লাল মলাট।
মোমের আলোয় বালকেরা
আমাকে গলা ছেড়ে পাঠ করতো।
বাংলা বই। মোমের আলোয়।
খোদা আমাকে মানুষ বানালো।
কেউ পড়তে পারে না!
বাগান
বাগানে অনেক গাছ আছে। একটা তরুণ গাছে ফুল
ফুটেছে। সে খুব খুশি। এবারই তার ডালে প্রথম
ফুল ফুটলো। ফুল ফোটার আনন্দে সে লাল হয়ে
উঠছে। আর একটু পর পর বাতাসে ফুল দোলাচ্ছে।
পাশে কয়েকটা গাছ যারা ফুল ফোটাতে ফোটাতে
প্রবীণ হয়ে গেছে—তরুণ গাছটার বেহায়াপনা দেখে
তো অবাক। তারা বলছে, ‘ডালে এখনো ২/৪টা ভালো
পাখি বসলো না এরই মধ্যে এতো!’ —বাগানের শেষ
প্রান্তে একটা চারা নীরবে গাছ হবার সাধনা করছে।
তোমার দিকে যাই
চোখের সামনে পুড়ছে আমার ডানা
তীরন্দাজের তীরগুলো তাক করা
তবুও তোমাকে বলছি দূরের পাখি
আমার এখনো উড়তে অনেক বাকি
পুতুল
রাত আমারে দিনের দিকে টানে
দিন আবারো রাতের কাছে আনে
এ চুল টানে তো ও এসে আঁচড়ায়
আমার জীবন কাটে টানা হেঁচড়ায়!
পিঁপড়া
একটা কাপ দশটা মুখ
লাল পিঁপড়া কাঁপছে বুক
চিনির দানা ভেঙ্গে আনা
দশটা মুখে একটা সুখ!
নদী
নদীটা গভীর কিনা
দেখতে ইচ্ছে হয়
আমি সাহস পাই না
আমার ডুবে যাবার ভয়!
আমি
আমি যে পথেই হাঁটি
পায়ের তলায়
মাটি থাকে
আর মাথা আকাশের দিকে।
অবুঝ
খুন বন্দুক বোঝে না
বন্দুক খুন বোঝে না
মানুষ দুটোই বোঝে
ফলে বন্দুক খোঁজে!
0 মন্তব্যসমূহ