ফুলকন্যা(ভালোবাসার গল্প) - আব্দুল্লাহ্ আল সাকিব

 

ফুলকন্যা(ভালোবাসার গল্প) - আব্দুল্লাহ্ আল সাকিব


বিকাল পেরিয়ে গেছে অনেক আগেই। সূর্যটা আর দেখা যাচ্ছে না পশ্চিমের আকাশে। কিন্তু রক্তিম আভা রয়ে গেছে পুরো আকাশ জুড়ে। কোনো কিছুতেই মন বসাতে পারছি না। আজকে অনেক ধকল পোহাতে হয়েছে।  রাহির সাথে আমার বিয়ে হয়েছে পাঁচ বছর হলো। এই পাঁচ বছরে কতবার যে ঝগড়া করে বাপের বাড়ি গিয়েছে তার হিসাব রাখিনি। যতদিন বাপের বাড়িতে থাকে ততদিন আমার কপালে শান্তি থাকে না। একটু পর পর কল করে উদ্ভট সব প্রশ্ন করবে এবং বারাবাড়ি রকমের আদেশ ছুড়ে দিবে। আজকে একটু বেশিই বারাবাড়ি করে ফেলেছে, তাই আমিও দুচার কথা শুনিয়ে দিয়েছি। মেয়েটা বোধহয় কষ্ট পেয়েছে। আধঘন্টা পর পর কল করতো, আজ দু'ঘন্টা পেরিয়ে গেছে এখনো কোনো কল এলো না। তাই বোধহয় আজকে মনটা এত অশান্ত হয়ে আছে। হয়তোবা অনেক বেশি ভালোবাসি এর জন্যই এমনটা হচ্ছে। 

গায়ে একটা চাদর পেঁচিয়ে বেরিয়ে আসলাম রাস্তায়। ভালো শীত পরেছে। ভেবেছিলাম চাদরটাতেই কাজ চলে যাবে।

সন্ধ্যা হতে চলেছে। হাটতে হাটতে  লেকের ধারে চলে এসেছি। বদলি হয়ে এখানে আসার পর থেকে রাহির মুখে বহুবার এই লেকটির প্রশংসা শুনেছি। সত্যিই অসাধারণ। সূর্যের রক্তিম আভা লেকের গায়ে জড়িয়ে আছে। এযেনো কৃত্রিম লেকের গায়ে প্রকৃতির একটুখানি ছোয়া। প্রকৃতির সৌন্দর্য সকল সৌন্দর্যের উর্ধ্বে। প্রকৃতির আলাদা একটা  মাধুর্য আছে যা  তাকে এত বেশি আকর্ষণীয় করে তোলে। কোনো এক অজানা কারোনে রাহির শূন্যতা অনুভব করছি। সত্যিই কি অজানা কারন? নাকি কারনটা আমি জানি? রাহির প্রতি বিশ্বাস এবং ভালোবাসা তার শূন্যতা আমাকে অনুভব করাচ্ছে।

অন্ধকার নেমে এসেছে । চারিপাশে আলো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার সাথে লেকের সৌন্দর্য মলিন হয়ে গেছে। অথচ ভরা পুর্নিমায় চোখ ঝলসানো চাদের আলোয় লেকের অসম্ভব সৌন্দর্যে গা শিউরে উঠবে।

রাত হয়েছে। এবার বাড়ি ফিরতে হবে। কাল সকালে রাহির সাথে দেখা করতেই হবে। রাগ ভাঙিয়ে নিয়ে আসতে হবে।

সকাল সকাল বের হয়েছি। রাহিকে আনতে যাচ্ছি। আচ্ছা রাহির জন্য কিছু নিয়ে গেলে কেমন হয়। অনেক্ক্ষণ হলো কোনো রিক্সা পাচ্ছি না। হঠাৎ পাঁচ ছয় বছরের  একটা মেয়ে আমার সামনে এসে দাড়ালো।  মিটি মিটি চোখে তাকিয়ে দেখছে আমাকে। জটপাকানো  উষ্কখুষ্ক চুল আর গায়ে মলিন কাপড়। কিন্তু   তার মুখখানা ভীষন রকম মায়াবী। যে কারো মনে নাড়া দিয়ে ওঠবে। বুকের সাথে জাপ্টে ধরে আছে একটা লাল কৌটা। যাতে ভেজানো আছে অসংখ্য লাল গোলাপ। এক মুহূর্তের জন্য মনে হবে যেনো একটা ফুল কন্য রাস্তায় ঘুরে বেরাচ্ছে। মেয়েটা ফুল গুলো নিচে নামিয়ে রাখলো। হাতের ইশারায় কিছু একটা বুঝাতে চাচ্ছে। কিন্তু কেনো? অবশেষে বুঝলাম। সৃষ্টিকর্তা তাকে দিয়েছে সৌন্দর্য কিন্তু কথা বলার ক্ষমতা টুকু দেয়নি। এতোটা  মায়া মিশ্রিত একটা মেয়ে কথা বলতে পারে না ভেবে মনটা বিষন্ন হয়ে গেলো। মেয়েটা আমায় ইশারায় ফুল নিতে বলছে। রাহির জন্য তার প্রিয় কিছু লাল গোলাপ নিলে মন্দ হয় না। রাগ ভাঙানো সহজ হয়ে যাবে। ছয়টা ফুল হাতে তুলে নিলাম। দাম জিজ্ঞেস করতেই মেয়েটা আঙুলের দাগ গুনে গুনে বুঝিয়ে দিলো একশো আশি টাকা দিতে হবে। আমি একশো টাকার দুইটা নোট আর সাথে একটা ফুল মেয়েটার দিকে বাড়িয়ে দিলাম। মেয়েটার মুখে মিষ্টি একটা হাসির ঝিলিক খেলে গেলো। আমার চোখ হঠাৎ জ্বলজ্বল করে উঠলো। এবার আমায় যেতে হবে।  

বাকি পাঁচটি রক্তলাল গোলাপ নিয়ে আমি চললাম আমার গন্তব্যে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ