পরিচিতিঃ
এম মনজুরুল ইসলাম
একটি সূচনালগ্নের শিরোনাম! যে শিরোনামের আবির্ভাব ঘটেছিল বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ থানার অন্তর্গত মুসলিম অধ্যুষিত জনপল্লি চককানু গ্রামে ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দের ২’রা সেপ্টেম্বর। সেই থেকেই তাঁর বেড়ে ওঠা চিরকাল সাধারণ ও স্বাভাবিক। তিনি জীবনকে ভালোবাসতে গিয়ে প্রতিটি মানুষের দোরগোড়ায় যেতে ভালোবাসেন, মানুষের বুকের সাথে বুক মিলিয়ে নতুন সভ্যতার খোঁজে ছুটে বেড়াতে চান পৃথিবীর এমুড়ো থেকে ওমুড়ো। তাঁর চৌদ্দপুরুষের কেউ হয়তো বা লেখালেখিটাকে ভালোবাসতেন বলেই শব্দকে ভেঙে ভেঙে বাক্য তৈরিতে তিনি ক্লান্ত হন না কখনো। লেখালেখিটাকে শরীরে প্রবাহমান রক্তের হিমোগ্লোবিন ভাবতেও ভালো লাগে তাঁর। কিন্তু মাঝে মাঝে শব্দের দুর্ভিক্ষে ক্ষুধার্ত হয়ে ওঠেন। শব্দহীন রাত্রিগুলোকে ভক্ষণ করে পরিপুষ্ট হতে চেয়েও বিষণ্ণতায় অস্থির হয়ে ওঠে তাঁর বুক। কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর মগজের নিউরনে সব সময় বিতাড়িত শব্দগুলো ধারণ করতে অনুপ্রেরণা দিলেও, মাঝে মাঝে রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহর মতো যাযাবর জীবন যাপনের জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠেন তিনি। শিক্ষায় হাতেখড়ি গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তারপর কতগুলো রাত, কতগুলো দিনের সাথে যুদ্ধ করতে করতে তিনি বলিষ্ঠ হতে থাকেন। পরিশেষে সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে গণিতে ২০১৬ সালে স্নাতকে ফার্স্ট ক্লাস ও ২০১৭ সালে স্নাতকোত্তরে ওই একই বিষয়েই ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হন। আপাতত শিক্ষকতা পেশায় নিজেকে ব্যস্ত রেখে জাতিকে দিয়ে চলেছেন বেগবান হওয়ার পরামর্শ।
![]() |
কবিঃ এম মনজুরুল ইসলাম |
বিচার চাইতে আসিনি,
ক্রসফায়ারের অনুমতি চাইতে এসেছি
- এম মনজুরুল ইসলাম
মান্যবর রাষ্ট্রপতি,
আমরা মৃত সংবিধানের ওপর দাঁড়িয়ে প্রতিবাদের মিছিলে আওয়াজ
তুলতে জানি, রমনার বটমূলে সবুজ ঘাসের ওপর আগুন
জ্বালিয়ে দেখতে জানি পূর্ব বাংলার ভাঙা শহিদ
মিনার, গির্জায় ধর্ষিত সোফিয়া লরেনের
ভাস্কর্যের সামনে অনশন করতে
করতে অসুস্থ হতেও
জানি...
আমাদের খিমার মতো
পাঞ্জাবিতে এখন ধর্ষিতার রক্ত লেগে থাকে,
সাড়ে সতেরো কোটি মানুষের প্রতিদিন
আত্মহত্যার ইতিহাস
লেখা থাকে বুক
পকেটে...
কিন্তু আমরা বিচার চাইতে আসিনি! রক্তের মানপত্র
হাতে আপনার কাছে এসেছি ধর্ষকদের
ক্রসফায়ারে হত্যার অনুমতি
নিতে...
শোকাহত ধর্ষিতাদের
অধিকার ফিরিয়ে দিতে প্রয়োজনে আমরা বঙ্গভবনে
মাথাকুটে আত্মাহুতি দেব, প্রাচ্যের
নির্যাতিত মানুষগুলোকে
দেখাব গণতান্ত্রিক
বাংলাদেশের
একটা স্বাধীন ডাকটিকেট...
মান্যবর রাষ্ট্রপতি,
আমরা সারারাত ধর্ষিতার রক্তমাখা জামা-কাপড় হাতে নিয়মতান্ত্রিক
আন্দোলনের কথা ভাবতে থাকি, গণঅনশনের
প্রস্তুতির জন্য সারিবদ্ধভাবে বসে থাকি
অপরাজেয় বাংলার
পাদদেশে...
কেউ কেউ স্বপন মামার টি-স্টলের সামনে শকুনি চোখে একে
অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে, কারও কারও
দীর্ঘশ্বাস থেকে বেরিয়ে আসে
মহাবিস্ফোরণ...
আপনার সদয় অনুমতিক্রমে অন্তত একজন ধর্ষককে আমরা
ক্রসফায়ারে দিতে চাই! আধ-খাওয়া একটা জ্বলন্ত
সিগারেটের মতো পুড়তে থাকা
ধর্ষিতার বুক থেকে বের
করে আনতে চাই
যন্ত্রণার বুলেট...
মান্যবর, আপনি
আমাদের একটি ভালোবাসাকে বাঁচানোর জন্য
একে-৪৭ রাইফেলের লাইসেন্স পাওয়ার
আবেদন পত্রে দস্তখত
করুন...
মান্যবর রাষ্ট্রপতি,
আজ আমরা অত্যাচার ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে শাসক হওয়ার
কথা বলতে আপনার কাছে এসেছি, প্রতিটি নারীকে
তাঁদের সম্ভ্রম লুটেরাদের মুণ্ডু একটানে
ছেঁড়ার অনুমতি চাইতে
এসেছি...
বিচারকের এজলাসে দাঁড়িয়ে বিচার প্রার্থী না হয়ে
ওদের ক্রসফায়ারে হত্যার জন্য অবনত
মস্তকে আর্জি জানাতে
এসেছি...
এ দেশ কি তবে এখন ধর্ষণের সূতিকালয়? আমরা এখন
নিজেদের অভ্যুত্থানের কথা না ভেবে ধর্ষিতার
কথা ভাবি কেন? একটি শ্বেত সংগ্রামের
জন্য আপনাকেই কেন ভাবি অন্তিম
কিংবদন্তি?
বাংলাদেশ কি তাহলে এক বছর থেকে শুরু করে
এক শ বছরের চামড়া ঢিলা মুমূর্ষু কোনো
এক বাস্তুচ্যুত থুত্থুড়ে বৃদ্ধা,
মান্যবর?
0 মন্তব্যসমূহ