আনন্দময়ীর আগমনে - কাজী নজরুল ইসলাম

     নন্দময়ীর আগমনে কবিতার জন্য নজরুলকে জেল খাটতে হয়েছে। কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯২২ সালে। সে সময় ভারত ব্রিটিশ শাসনের অধীনে ছিল এবং চারদিকে ঔপনিবেশিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছিল। নজরুল এই কবিতায় দেবী দুর্গাকে শুধু ধর্মীয় দেবী হিসেবে নয়, বরং শক্তি, ন্যায় ও মুক্তির প্রতীক হিসেবে দেখিয়েছেন। দুর্গার আগমনকে তিনি শোষক শক্তি ব্রিটিশ শাসনের বিনাশের বার্তা হিসেবে ব্যবহার করেছেন। 
আনন্দময়ীর আগমনে কবিতটি  ‘ধূমকেতু’র যে সংখ্যায় ছাপা হয় এই কবিতার জন্য সেই সংখ্যা  বাজেয়াপ্ত হয় এবং কলকাতার চীফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে রাজদ্রোহিতার অভিযোগে নজরুলের বিরূদ্ধে মামলা দায়ের করে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

Anondomoyeir Agomone - Kazi Nazrul Islam

আনন্দময়ীর আগমনে
 - কাজী নজরুল ইসলাম


আর কতকাল থাকবি বেটী মাটির ঢেলার মূর্তি আড়াল? 
স্বর্গ যে আজ জয় করেছে অত্যাচারী শক্তি চাঁড়াল। 
দেব–শিশুদের মারছে চাবুক, বীর যুবকদের দিচ্ছে ফাঁসি, 
ভূ-ভারত আজ কসাইখানা, আসবি কখন সর্বনাশী? 

মাদীগুলোর আদি দোষ ঐ অহিংসা বোল নাকি-নাকি 
খাঁড়ায় কেটে কর মা বিনাশ নপুংসকের প্রেমের ফাঁকি। 
ঢাল তরবার, আন মা সমর, অমর হবার মন্ত্র শেখা, 
মাদীগুলোয় কর মা পুরুষ, রক্ত দে মা রক্ত দেখা। 

তুই একা আয় পাগলী বেটী তাথৈ তাথৈ নৃত্য করে 
রক্ত-তৃষার 'ময়-ভুখা-হু'র কাঁদন-কেতন কণ্বে ধরে।- 
অনেক পাঁঠা-মোষ খেয়েছিস, রাক্ষসী তোর যায়নি ক্ষুধা, 
আয় পাষাণী এবার নিবি আপন ছেলের রক্ত-সুধা। 
দুর্বলেরে বলি দিয়ে ভীরুর এ হীন শক্তি-পূজা 
দূর করে দে, বল মা, ছেলের রক্ত মাগে দশভুজা।.. 

'ময় ভুখা হুঁ মায়ি' বলে আয় এবার আনন্দময়ী 
কৈলাশ হতে গিরি-রাণীর মা দুলালী কন্যা অয়ি!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ